রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন
রায়হান আহমেদ তপাদার:
ষড়ঋতুর এই দেশে এখন আর ছয় ঋতু নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীত, গরম ও বর্ষা এ তিন ঋতুরই প্রভাব। প্রচণ্ড গরম, অতিমাত্রায় শীত ও অতিবৃষ্টির প্রভাব বেশি। এ বছর শীত অনেক পরে এসেছে। পৌষ মাসের শেষ দিকে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। সারা দেশে এখন হাড় কাঁপানো শীত। এই শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ে উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা তিন-চার গুণ বেশি।
শীতে এখন কাঁপছে গোটা দেশ। শীত এলে অনিবার্যভাবেই প্রকৃতিতে ঘটে কিছু পরিবর্তন। হেমন্তের ফসল কাটা শেষ হয়। নবান্নের সঙ্গে পিঠা পায়েসের আয়োজন চলে গ্রামাঞ্চলে। শীত একদিকে যেমন উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। অন্যদিকে তীব্র শীত জীবনযাত্রা বিপন্ন করে তোলে মানুষজনের। দরিদ্ররা শীতের কাপড়ের অভাবে কষ্ট পায়। শীতকাল কারও কারও জন্য আনন্দের বিষয় আবার কারও জন্য বিষাদের। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের জন্য শীত মানে ভয়াবহ দুঃসংবাদ। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে তাদের কাছে এই ঋতু হয়ে ওঠে মৃত্যুযন্ত্রণার সমতুল্য। তীব্র শীত দেখিয়ে যায় তার নিষ্ঠুর রূপ। সড়কের পাশে, বাস ও ট্রেন স্টেশনে, বাজার-ঘাটে রাতের বেলা এমন অনেক অসহায় মানুষকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের রাত কাটে নির্ঘুম অবস্থায় শীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে।
ঋতুর আবর্তনে শীত আসবে, এটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে খাপ খেয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। তবে তীব্র শীতে গরিব ও দুস্থ মানুষের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়। জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে পড়ে দিনমজুর, ভ্যানচালক, ইজিবাইক চালক, পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিকসহ সাধারণ কর্মজীবী এবং ছিন্নমূল মানুষের। খেটে খাওয়া মানুষরা প্রচন্ড ঠান্ডায় কাজে যোগ দিতে দুর্ভোগে পড়ছেন। তাদের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট হচ্ছে বেশি। তাই সমাজের বিত্তবান ও মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষদের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো একান্ত প্রয়োজন। সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। শীতবস্ত্র বিতরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানব সেবা। সামান্য সহযোগিতায় শীতার্ত মানুষরা সুস্থ ও ভালো থাকতে পারবে। কনকনে শীতে শীতবস্ত্র তাদের মুখে হাসি ফোটাবে।
সরকারিভাবে অনেক সময় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা কিংবা সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে শীতবস্ত্র দেওয়া হয়। আবার কখনো রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন থেকেও শীতবস্ত্র দেওয়া হয়। তবে এসব সহায়তা সবসময় প্রকৃত মানুষের কাছে পৌঁছায় না। আবার কোথাও কোথাও শীতবস্ত্র বিতরণে দলীয়করণও লক্ষ করা যায়। যা মোটেও কাম্য নয়।
অনেক সামর্থ্যবান মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কম্বল ও শীতবস্ত্র দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন। যুবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরনো কাপড় সংগ্রহ করেন এবং তা গরিবদের মধ্যে বণ্টন করেন। শীত এলে এসব ছিল চিরচেনা সামাজিক কর্মকান্ড। কিন্তু এখন অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শীতবস্ত্র প্রদানের ছবি প্রকাশই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউরোপ-আমেরিকা বা অন্যান্য শীতপ্রধান দেশের তুলনায় আমাদের দেশে শীত অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে। আমাদের দেশে বরফ পড়ে না। তুষারঝড় প্রকৃতিকে লন্ডভন্ড করে না। তবে বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশের আবহাওয়া বদলে গেছে, অনাবৃষ্টি, অকাল বৃষ্টি, অকাল বন্যা, তীব্র তাপপ্রবাহ আমাদের সহ্য করতে হচ্ছে। শীতজনিত রোগব্যাধি থেকে মানুষজনকে রক্ষার করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু সরকার নয়, সমাজের বিত্তবানরা এ জন্য এগিয়ে আসতে পারেন। অনেক সংগঠন এ সময় নতুন-পুরাতন কাপড় সংগ্রহ করে শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করে। এই মানবিক কর্মে আমরাও যুক্ত হতে পারি। যদিও এই সহায়তা হতে পারে আর্থিক, হতে পারে মানবিক বা সহমর্মিতা প্রদর্শন।
প্রতি বছর বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ প্রচন্ড শীতের সময় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটায়। এদের যেখানে এক বেলা খাবারের নিশ্চয়তা নেই তারা কীভাবে শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করবে। আসুন আমরা সবাই নিঃস্বার্থভাবে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসি।
লেখক : গবেষক ও কলাম লেখক
raihan567@yahoo.com
ভয়েস/আআ